ঝন্টু, সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধিঃসিরাজগঞ্জের তাড়াশে কমিউনিটি ক্লিনিকে ঔষধ সরবরাহ বন্ধ সাড়ে তিন মাস ধরে! বন্ধ প্রান্তিকের জনগোষ্ঠীর চিকিৎসা সেবা। তাড়াশ উপজেলার ভাটারপাড়া গ্রামের বাসিন্দা রজনী মাহাতো জ্বর-শরীর ব্যথা নিয়ে কমিউনিটি ক্লিনিকে আসেন। সেখানে স্বাস্থ্য সেবা দানকারী বা কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার (সিএইচসিপি) সঞ্জিত কুমার তাঁকে জানান, রোগের ব্যবস্থাপত্র দিতে পারব। কিন্তু ঔষধ দিতে পারবেননা। কেননা গত প্রায় সাড়ে তিন মাস হলো উপজেলার কমিউনিটি ক্লিনিকে সরকারি ভাবে ঔষধ সরবরাহ নেই। তাই কমিউনিটি ক্লিনিকে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা ঔষধ না পেয়ে খালি হাতে বাড়ী ফিরে যাচ্ছেন।
সঞ্জিত কুমার আরো জানান, যদিও সাড়ে তিন মাস আগে প্রত্যন্ত এলাকার এ সকল কমিউনিটি ক্লিনিকে গ্রামের নারী, শিশু,গর্ভবতী, প্রসূতি মাসহ মানুষের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিতে সরকারী ভাবে প্রায় ২২ প্রকার ঔষধ সরবরাহ ঠিকঠাক ভাবেই চলে আসছিল। কিন্তু আপাতত ২২ প্রকার ঔষুধ যেমন- জ্বর, সর্দি, ডায়েবেটিক, হৃদরোগ, ভিটামিন, মা ও শিশুদের নানা রোগে প্রয়োজনীয় ঔষধ সরবরাহ বন্ধ আছে। এ জন্য তিনি কমিউনিটি ক্লিনিকে আগত রোগীদের কে তাড়াশ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যাওয়ায় পরামর্শ দেন।
স্থানীয়রা জানান, দীর্ঘদিন যাবৎ ঔষধ না পাওয়া প্রান্তিকের লোকজন ঔষধ থেকে বঞ্চিত হয়ে কমিউনিটি ক্লিনিক গুলো থেকে বিমুখ হয়ে পড়ছেন।
সিরাজগঞ্জ জেলা সিভিল সার্জনের অফিস সূত্রে জানা যায়, প্রত্যন্ত জনপদের মানুষের স্বাস্থ্যসেবা দোর গোড়ায় পৌঁছে দিতে তাড়াশে আটটি ইউনিয়ন ও একটি পৌর এলাকায় ৩১টি কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপন করা হয়েছে। এরমধ্যে বর্তমানে ৩০ টি চালু আছে। বাঁকী ১টি চালুর অপেক্ষকায় আছে। চালু থাকা কমিউনিটি ক্লিনিকে থেকে বিনা খরচে চিকিৎসার পরামর্শ মত ২২ প্রকার ঔষুধ বোগীদের রোগ অনুযায়ী কমিউনিটি ক্লিনিক থেকেই বরাবর সরবরাহ করা হয়।
উপজেলার শোলাপাড়া কমিউনিটি ক্লিনিকের স্বাস্থ্য সেবা দানকারী বা কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার (সিএইচসিপি) ফিরোজ জামান জানান, সাধারণত তিন মাস পরপর তাড়াশ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে থেকে ৩০টি ক্লিনিকে ঔষুধ সরকরাহ করা হতো। সরবরাহ করা ঔষুধ এ ক্লিনিক এলাকার তিন মাসে গড়ে ৩ হাজার ৫০০ থেকে ৩ হাজার ৭০০ রোগীর ব্যবস্থা পত্রের অনুকুলে বিভিন্ন রোগের প্রায় ২২ প্রকার ঔষধ চাহিদার ওপর ভিত্তি করে সরবরাহ সম্ভব ছিল। কিন্তু গত ২০২৪- ২০২৫ অর্থ বছরের ১৬ জুন সর্বশেষ এক কাটুন ওষুধ সরবরাহ করা হয়েছিল। যা সপ্তাহ দু চলার পর শেষ হয়ে যায়। তারপর অদ্যবধি তাড়াশ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে থেকে ৩০টি ক্লিনিকের কোনটিতেই আর ওষুধ সরবরাহ করা হয়নি।
অথচ উপজেলার ৩০টি কমিউনিটি ক্লিনিকে শুক্রবার ছাড়া সপ্তাহের ছয়দিন সকাল ৯টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত খোলা রাখা হয়। পাশাপাশি প্রত্যন্ত এলাকার শতশত লোকজন বিনা মূল্যে ঔষধ ও স্বাস্থ্য সেবা পেয়ে আসছেন। কিন্তু গত সাড়ে তিন মাস ঔষধ সরবরাহ না থাকায় জ্বর, সর্দি,ডায়েবেটিক, হৃদরোগ,ভিটামিন, মা ও শিশুদের নানা রোগে প্রয়োজনীয় বিনা মূল্যের সরকারি ঔষধ মিলছেনা এমনি ভাষ্য, সগুনা ইউনিয়নের সবুজপাড়া কমিউনিটি ক্লিনিকে আসা রোগী মো. মোখলেছুর রহমানের।
বর্তমানে ঔষধ সরবরাহ বন্ধ থাকার সুবাদে কমিউনিটি ক্লিনিকে ঔষধের ঘাটতির কারণে বশির ভাগ ক্লিনিক সকাল ১০টার পর খোলা হচ্ছে এবং যোহরের নামাজের আযান দিলেই বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।
এ দিকে তাড়াশ পৌর এলাকার কাউরাইল কমিউনিটি ক্লিনিকে শেফালী খাতুন, মনিরা পারভীন, টুটুল হোসেনসহ অনন্ত ৮ থেকে ১০ জন রোগীকে কমিউনিটি ক্লিনিকে প্রয়োজনীয় ঔষধ না পেয়ে খালি হাতে ফিরতে যাচ্ছেন। তাঁরা জানিয়েছেন, আমরা স্বল্প আয়ের মানুষ। বিনা মূল্যের সরকারী ঔষধ পেয়ে উপকৃত হয়ে আসছিলাম। সে ঔষধ বেশ কিছুদিন হলো পাচ্ছিনা। প্রায় সাড়ে তিন মাস ধরে কমিউনিটি ক্লিনিকে ঔষধের তীব্র সংকট চলছে। এতে প্রান্তিকের নিন্ম আয়ের মানুষের স্বাস্থ্য সেবা কার্যক্রম চরম ব্যাহত হচ্ছে। ভোগান্তিতে আছেন দরিদ্র জনগোষ্ঠী।
অপরদিকে পৌর এলাকার সোলাপাড়া কমিউনিটি ক্লিনিকের স্বাস্থ্য সেবা দানকারী বা কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার (সিএইচসিপি) মোঃ ফিরোজ জামান বলেন, ঔষধ থাকলে রেগীদের দিতে পারি। না থাকলে দিতে পারিনা। যেহেতু দুই মাস হলো প্রয়োজনীয় ঔষধের সরবরাহ নেই। তাই সেবা দানেও ঢিলেমতাল অবস্থা চলছে।
নাম প্রকাশে অনিইচ্ছুক এক স্বাস্থ্য কর্মী বলেন, অনেক দিন ধরে ওষুধ নেই। রোগীরা এসে ঔষধ না পেয়ে আমাদের গালাগাল করেন, বিষয়টি কর্মকর্তাদের জানিয়েছি। তাঁরা বলেছেন, যা আছে সেটা দিয়েই চিকিৎসা দেন। না থাকলে পরামর্শ দেন।
এ প্রসঙ্গে তাড়াশ উপজেলা ৫০ শয্যাবিশিষ্ট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কর্মকর্তা ডা. মো. এরফান আহম্মেদ জানান, ২০২৫-২০২৬ নতুন অর্থ বছরের ঔষধ কেনার দরপত্র আহবান করা হয়েছে। আশা করছি স্বল্প সময়ে কমিউনিটি ক্লিনিক গুলোতে প্রয়োজনীয় ঔষধ সরবরাহ সম্ভব হবে।