নিজস্ব প্রতিবেদক:
সিরাজগঞ্জ বিআরটিএ অফিসে ভয়ংকর এক জালিয়াতি সিন্ডিকেটের সন্ধান মিলেছে। সরকারি কর্মকর্তার ছত্রছায়ায় গাড়ির মালিকানা পরিবর্তনের নামে চলছে প্রতারণা ও কোটি টাকার অবৈধ লেনদেন।
অভিযোগ অনুযায়ী, গাড়ি নম্বর SERAJGANJ-NA-11-0092 পিকআপটি প্রথমে AHI Motors Ltd কোম্পানি থেকে মোঃ শাকিল আহমেদ নামে এক ব্যক্তি ক্রয় করেন। এরপর শাকিল আহমেদ গাড়িটি বিক্রি করে দেন কৌশিক আহমেদ-এর কাছে।
কিন্তু এখানেই শুরু হয় ভয়ংকর প্রতারণার গল্প—
কৌশিক আহমেদ কোম্পানির কাছ থেকে কোনো বৈধ রিলিজ অর্ডার বা কাগজপত্র ছাড়াই বিআরটিএ অফিসে গিয়ে নিজের নামে মালিকানা পরিবর্তনের প্রক্রিয়া শুরু করেন। বিআরটিএর কিছু অসাধু কর্মকর্তা ও দালাল চক্রের সহযোগিতায় সেই অবৈধ প্রক্রিয়া অনেক দূর এগিয়ে গেলেও, আইনগত জটিলতার কারণে বর্তমানে মালিকানা পেন্ডিং অবস্থায় রয়েছে।
কৌশিক আহমেদ পরে গাড়িটি বিক্রি করে দেন মোশারফ হোসেন নামে এক দালাল চক্রের কাছে। এই চক্র নিয়মিতভাবে জাল কাগজপত্র তৈরি করে গাড়ির মালিকানা পরিবর্তনের মাধ্যমে অবৈধ বাণিজ্য পরিচালনা করে আসছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
এরপর কিছুদিন পর মোশারফ হোসেন গাড়িটি বিক্রি করে দেন আরিফুর রহমান নামে এক ব্যক্তির কাছে — যিনি বর্তমানে গাড়িটির ক্রয়সূত্রে বৈধ মালিক। কিন্তু এই জালিয়াতির কারণে এখন তিনিও ভোগান্তিতে পড়েছেন, কারণ সরকারি রেকর্ডে মালিকানা এখনও জটিল অবস্থায় রয়েছে।
গাড়ির বিস্তারিত তথ্য:
রেজি. নং: SERAJGANJ-NA-11-0092
চ্যাসিস নং: LWU2DM2C4FKM07549
ইঞ্জিন নং: 50503763D
ধরন: পিকআপ
অভিযোগে জানা গেছে, এই জালিয়াতি সংঘটিত হয় তৎকালীন সহকারী পরিচালক মোঃ আলতাফ হোসেন-এর দায়িত্বকালীন সময়ে। তাঁর প্রত্যক্ষ সহযোগিতাতেই অবৈধ মালিকানা পরিবর্তনের প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয় বলে অভিযোগ উঠেছে। বর্তমানে তিনি পাবনা বিআরটিএ অফিসে দায়িত্ব পালন করছেন।
বর্তমান মালিক আরিফুর রহমান বলেন,
“আমি বৈধভাবে গাড়ি কিনেছি, কাগজপত্র সম্পূর্ণ করতে পারছিনা , কিন্তু আজও গাড়িটি জালিয়াত চক্রের কারণে ঝুঁকিতে রয়েছে। সরকারি প্রতিষ্ঠানের ভেতরে যদি এমন প্রতারণা হয়, তাহলে সাধারণ মানুষ কোথায় যাবে?”
তিনি আরও বলেন,
“এই ঘটনার সঙ্গে যারা জড়িত, বিশেষ করে যারা সরকারি ক্ষমতা ব্যবহার করে জাল কাগজে মালিকানা বদল করেছে, তাদের আইনের আওতায় আনতে হবে।”
AHI Motors Ltd নিশ্চিত করেছে যে, তারা কখনও উক্ত গাড়ির জন্য কোনো রিলিজ অর্ডার ইস্যু করেনি। অর্থাৎ কৌশিক আহমেদ যে মালিকানা প্রক্রিয়া শুরু করেছিলেন, তা পুরোপুরি অবৈধ ও আইনবিরোধী।
দেশের সচেতন মহল প্রশ্ন তুলছে—
বিআরটিএর মতো একটি সরকারি প্রতিষ্ঠানে কীভাবে এমন ভয়ংকর জালিয়াতি সম্ভব?
সরকারি কর্মকর্তা ও দালাল চক্র মিলে রাষ্ট্রীয় সিস্টেমকে ব্যবহার করে কীভাবে কোটি টাকার প্রতারণা চালাচ্ছে?
সাধারণ মানুষের সম্পত্তি রক্ষায় এখন কোথায় প্রশাসনের নজরদারি?
আরিফুর রহমান ইতোমধ্যেই বিআরটিএ চেয়ারম্যান বরাবর লিখিত অভিযোগ দাখিল করেছেন। তিনি দ্রুত তদন্ত, দোষীদের শাস্তি এবং বৈধ মালিকানা পুনঃপ্রতিষ্ঠার জোর দাবি জানিয়েছেন।
তিনি অনুরোধ করেছেন—
“এই ভয়ংকর সিন্ডিকেটের মূল হোতাদের চিহ্নিত করে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হোক, যাতে আর কোনো নিরপরাধ মালিক এমন প্রতারণার শিকার না হন।”