
️ নাসির উদ্দিন সৈকত, বরিশাল
আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে দক্ষিণাঞ্চলের রাজনীতিতে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে।
বিশেষ করে বরিশাল-১ (গৌরনদী–আগৈলঝাড়া) আসনে ইতোমধ্যে মাঠে নেমেছেন সাতজন সম্ভাব্য প্রার্থী।
তারা হলেন — ইঞ্জিনিয়ার সোবহান, এম জহির উদ্দিন স্বপন, আকন কুদ্দুসুর রহমান, এ্যাড. গাজী কামরুল, এ্যাড. কামরুল ইসলাম সজল, রাসেল সরদার এবং হাফেজ কামরুল ইসলাম খান (বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী প্রার্থী)।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এ আসনে এবারের ভোটযুদ্ধ হবে ত্রিমুখী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় —
দলীয় প্রভাব
তৃণমূল জনপ্রিয়তা
এবং নতুন নেতৃত্বের উত্থানের মধ্যে।
বরিশাল-১ আসন গঠিত গৌরনদী ও আগৈলঝাড়া উপজেলা নিয়ে।
দীর্ঘদিন ধরে এই আসন দক্ষিণাঞ্চলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক কেন্দ্র হিসেবে বিবেচিত।
ভোটাররা সবসময় উন্নয়ন, সততা ও নেতৃত্বের যোগ্যতা যাচাই করেই রায় দিয়ে থাকেন।
২০০১ ও ২০০৮ সালের নির্বাচনে বড় রাজনৈতিক পালাবদলের সাক্ষী এই আসন— এবারও তেমনই এক হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের ইঙ্গিত দিচ্ছে।
স্থানীয় উন্নয়ন, আধুনিক শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের প্রতিশ্রুতি নিয়ে মাঠে নেমেছেন তিনি।
সমর্থকদের মতে, তিনি “প্রযুক্তিনির্ভর রাজনীতির আধুনিক প্রতিনিধি”।
দীর্ঘদিন ধরে অবকাঠামো ও জনসেবায় সক্রিয় থাকায় এলাকায় তাঁর অবস্থান শক্ত।
তবে তৃণমূলে দলীয় ঐক্য রক্ষা করাই এখন তাঁর বড় চ্যালেঞ্জ।
সাবেক সংসদ সদস্য ও বিএনপি নেতা এম জহির উদ্দিন স্বপন পুনরায় সক্রিয়ভাবে মাঠে।
কেন্দ্রীয় অভিজ্ঞতা ও তৃণমূল সংযোগের কারণে তিনি “আস্থার প্রতীক” হিসেবে পরিচিত।
তাঁর স্লোগান— “দলের প্রতি আনুগত্য, জনগণের প্রতি দায়বদ্ধতা।”
তরুণদের মধ্যে নতুন নেতৃত্বের দাবি থাকলেও স্বপনের জনভিত্তি এখনো অটুট।
তরুণ নেতৃত্বের প্রতীক কুদ্দুসুর রহমান “পরিবর্তনের আহ্বান” নিয়ে মাঠে নেমেছেন।
তৃণমূল পর্যায়ে সাংগঠনিকভাবে সক্রিয় থেকে যুবসমাজের আস্থা অর্জন করেছেন তিনি।
তাঁর বক্তব্য — “রাজনীতি মানে জনগণের সেবা, ক্ষমতার প্রতিযোগিতা নয়।”
সততা ও বাস্তবভিত্তিক পরিকল্পনায় তিনি তরুণ ভোটারদের কাছে দিনদিন জনপ্রিয় হচ্ছেন।
স্থানীয় রাজনীতিতে পরিচিত মুখ গাজী কামরুল শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সমাজসেবামূলক কর্মকাণ্ডে সুপরিচিত।
তৃণমূলে তাঁর জনসম্পৃক্ততা ব্যাপক, তবে দলীয় অভ্যন্তরীণ প্রতিযোগিতা এখনো বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে রয়ে গেছে।
দীর্ঘদিন ধরে দলের কঠিন সময়ে সক্রিয় থাকা এই নেতা এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু।
তিনি বলেন, “আমি রাজনীতি করি মানুষের কল্যাণের জন্য, পদ-পদবীর জন্য নয়।”
তাঁর সাদাসিধে জীবনযাপন, সততা ও তৃণমূলের প্রতি দায়বদ্ধতা তাঁকে জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য করেছে।
ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে সক্রিয় তরুণ সমাজসেবক রাসেল সরদার দ্রুত জনপ্রিয় হচ্ছেন।
শিক্ষা, স্টার্টআপ ও সামাজিক উদ্যোগের মাধ্যমে তিনি তরুণদের মধ্যে প্রভাব বিস্তার করেছেন।
তাঁর স্লোগান— “নতুন চিন্তা, স্বচ্ছ রাজনীতি ও তরুণ নেতৃত্ব।”
তাঁর গণসংযোগে প্রতিদিনই তরুণ ভোটারদের উপস্থিতি বাড়ছে।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী-এর মনোনীত প্রার্থী হাফেজ কামরুল ইসলাম খান এখন আলোচনার কেন্দ্রে।
ধর্মীয় মূল্যবোধ, ন্যায়ভিত্তিক সমাজ গঠন ও মানবসেবার প্রতিশ্রুতি নিয়ে তিনি মাঠে আছেন।
তাঁর সমর্থকরা বলেন, “হাফেজ কামরুল ইসলাম খান একজন সৎ, শিক্ষিত ও ইসলামী আদর্শে বিশ্বাসী প্রার্থী।”
মসজিদ-মাদরাসা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে তাঁর নিয়মিত যোগাযোগ রয়েছে, বিশেষ করে আগৈলঝাড়া অঞ্চলে তাঁর প্রভাব বাড়ছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, জামায়াতের ঐতিহ্যগত ভোটব্যাংক তাঁকে এ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রাখবে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন — বরিশাল-১ আসনে এবারের লড়াই হবে বহুমাত্রিক।
একদিকে অভিজ্ঞ রাজনীতিকদের ঐতিহ্য, অন্যদিকে তরুণ নেতৃত্বের উত্থান এবং ইসলামপন্থী ভোটব্যাংকের পুনরুজ্জীবন।
ভোটাররা এবার সিদ্ধান্ত নেবেন উন্নয়ন, ধর্মীয় মূল্যবোধ ও সুশাসনের প্রতিশ্রুতির ওপর ভিত্তি করে।
নির্বাচনী মাঠ এখন চরম সরব, প্রার্থীরা ব্যস্ত গণসংযোগ, সভা-সমাবেশ ও মানবিক কার্যক্রমে।
ভোটারদের কাছে এখন বড় প্রশ্ন —
কে হবেন উন্নয়ন, সততা ও জনগণের আস্থার প্রকৃত প্রতিনিধি?
শেষ পর্যন্ত জয়-পরাজয় নির্ভর করবে দলীয় প্রভাব নয়, বরং জনগণের হৃদয়ে কে জায়গা করতে পারেন, তার ওপরেই।