
থানচি (বান্দরবান) প্রতিনিধি:
পার্বত্য অঞ্চলে শান্তি, শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা বজায় রাখার পাশাপাশি দুর্গম এলাকায় অবকাঠামো উন্নয়ন ও মানবিক সহায়তা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। এরই ধারাবাহিকতায় সদর দপ্তর ৬৯ পদাতিক ব্রিগেড ও বান্দরবান রিজিয়নের সার্বিক তত্ত্বাবধানে দি ১৬ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট বাকলাইপাড়া সেনা সাব-জোনের দায়িত্বপূর্ণ পুনর্বাসিত পাড়াগুলোতে মেডিকেল সেবা ও নিরাপদ পানি সরবরাহ কার্যক্রম পরিচালনা করছে।
২১–২২ সালে কে এন এফ সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর তৎপরতায় অতিষ্ঠ হয়ে বম পরিবারের অনেকেই এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যায়। দীর্ঘদিন জনশূন্য থাকায় পাড়াগুলো বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়ে; দেখা দেয় খাদ্যসামগ্রী, বিশুদ্ধ পানি ও চিকিৎসা সংকট। ২০২৪ সাল থেকে সেনাবাহিনীর উদ্যোগে পুনর্বাসন কাজ শুরু হলে ধীরে ধীরে পাড়ার বাসিন্দারা নিরাপদে ঘরে ফিরতে শুরু করে।

আসন্ন বড়দিন ও থ্যাংকসগিভিং উৎসবকে সামনে রেখে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে বিশেষ কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। এর অংশ হিসেবে পুনর্বাসিত পাড়াগুলোতে নিয়মিত খাদ্যসামগ্রী বিতরণ, চিকিৎসা সেবা এবং বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থাপনা অব্যাহত রয়েছে। সম্প্রতি বাকলাইপাড়া ও প্রাতাপাড়ায় একটি করে ১০ হাজার লিটারের পানির জলাধার নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে, যা পাড়াবাসীদের দীর্ঘদিনের নিরাপদ পানি সংকট দূরীকরণে বড় ভূমিকা রাখবে।
মঙ্গলবার দুপুরে প্রাতাপাড়ায় নতুন জলাধারের উদ্বোধন করেন মেজর আনোয়ারুল ইসলাম, পিএসসি, উপ-অধিনায়ক, ১৬ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট। এসময় বিভিন্ন পাড়ার কারবারি, ধর্মযাজক, শিক্ষক ও গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন। তিনি পাড়াবাসীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন এবং খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করেন। পাশাপাশি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের অংশগ্রহণে মেডিকেল ক্যাম্প পরিচালিত হয়। এতে ২৯ পরিবারের ৩৭ জন পুরুষ, ৫১ জন নারী ও ৩৩ জন শিশু-কিশোর চিকিৎসাসেবা পায়।
এছাড়া বাকলাইপাড়া আর্মি ক্যাম্প থেকে বল্লমপাড়ার কারবারি ও প্রতিনিধিদের কাছে সোলার প্যানেল, ব্যাটারি এবং শিশু-কিশোরদের জন্য খেলাধুলার সামগ্রী হস্তান্তর করা হয়।
প্রাতাপাড়ার ধর্মযাজক সাঙ্কলিন বম সেনাবাহিনীর মানবিক সহায়তার প্রশংসা করে বলেন, “সেনাবাহিনী পাশে না থাকলে এত অল্প সময়ের মধ্যে আমরা আবার স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারতাম না। বিপদের সময় সেনাবাহিনীকে আমরা পরিবারের মতো পাশে পাই।”
বল্লমপাড়া, বাকলাইপাড়া ও প্রাতাপাড়ার কারবারিরাও সেনাবাহিনীর খাদ্য রসদ, চিকিৎসা সহায়তা ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানে সহযোগিতার প্রশংসা করেন। বল্লমপাড়ার কারবারি ইয়াদুই ম্রো বলেন, “এত দুর্গম এলাকায় পাহাড় পাড়ি দিয়ে সেনাবাহিনী আমাদের খাদ্য ও প্রয়োজনীয় সামগ্রী দেয়—এটা আমাদের জন্য অনেক বড় ব্যাপার।”
পাড়াবাসীদের উদ্দেশে মেজর আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, সেনাবাহিনী সবসময় মানুষের পাশে আছে এবং পাড়ার উন্নয়নে কাজ করে যাবে। তিনি সবাইকে মিলেমিশে থাকার আহ্বান জানান এবং শিশু-কিশোরদের অবশ্যই বিদ্যালয়ে পাঠানোর গুরুত্ব তুলে ধরেন।
তিনি আরও বলেন, “পার্বত্য অঞ্চল অভাবনীয় সম্ভাবনায় পরিপূর্ণ। অপরূপ সৌন্দর্যে ভরপুর বান্দরবান সময়ের সাথে আরও এগিয়ে যাক—এটাই আমাদের কামনা।”
সেনাবাহিনীর এ উদ্যোগে দুর্গম এলাকার পাড়াগুলোতে নতুনভাবে স্বস্তি, নিরাপত্তা ও উন্নয়নের স্রোত বইছে।