জলবায়ু উদ্বাস্তু ব্যবস্থাপনা ও পুনর্বাসন শক্তিশালীকরণে সন্দ্বীপে সেমিনার অনুষ্ঠিত
সন্দ্বীপ (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি
চট্টগ্রাম–৩ (সন্দ্বীপ) উপজেলায় জলবায়ুজনিত বাস্তুচ্যুতি মোকাবিলা ও পুনর্বাসন ব্যবস্থাকে আরও কার্যকর করার লক্ষ্যে “জলবায়ু উদ্বাস্তু ব্যবস্থাপনা ও পুনর্বাসন শক্তিশালীকরণ” শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে। রোববার (২৪ নভেম্বর ২০২৫) উপজেলা কনফারেন্স রুমে সামাজিক উন্নয়ন সংস্থা এসডিআই ও কোস্ট ফাউন্ডেশনের যৌথ উদ্যোগে পরিচালিত ক্লাইমেট চেঞ্জ অ্যান্ড রেজিলিয়েন্স (CCR) প্রজেক্টের আয়োজনে এই সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়।
সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মারুফ হাসান (ইউএনওর প্রতিনিধি)। সভাপতিত্ব করেন এসডিআই চট্টগ্রাম জোনের জোনাল ম্যানেজার মোঃ মিলন মিয়া। সঞ্চালনা করেন কমিউনিটি মোবিলাইজার বাদল রায় স্বাধীন এবং সিএসও গ্রুপের সহ-সভাপতি সাংবাদিক ইলিয়াস কামাল বাবর।
বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন—বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক সন্দ্বীপ শাখার ব্যবস্থাপক মোঃ আক্তারুজ্জামান সুজন, উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন, পিআইও প্রতিনিধি তপন মাহমুদ, সন্দ্বীপ শিল্পকলা একাডেমির সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম শিল্পী, সন্দ্বীপ প্রেস ক্লাব সভাপতি মোজাম্মেল হোসেন, জাতীয় সাংবাদিক সংস্থা সন্দ্বীপ শাখার সভাপতি ইলিয়াছ সুমন, প্রবন্ধিক মাস্টার নীলাঞ্জন বিদুৎ, ইসমাইল ফরিদ ও এসডিআই–এর আরএম মোঃ ফসিউল আলম। এছাড়া আশ্রয়ন প্রকল্পের বাসিন্দা কাজল বেগম, মোঃ ফরিদ, জেসমিন, জয়দেব জলদাসসহ স্থানীয় প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি ও এনজিও প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
বক্তারা বলেন, উপকূলীয় উপজেলা হিসেবে সন্দ্বীপ জলবায়ু পরিবর্তনের সর্বোচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলের একটি। সমুদ্রভাঙন, জলোচ্ছ্বাস, ঘূর্ণিঝড় ও লবণাক্ততা বৃদ্ধিতে প্রতিবছর বহু পরিবার বাস্তুচ্যুত হচ্ছে। বক্তাদের ভাষায়—
“ঘর আছে, কিন্তু জীবনযাপন অনিশ্চিত—এটাই সন্দ্বীপের বহু আশ্রয়ন প্রকল্পের বাস্তবতা।”
সেমিনারে গুরুত্ব পায় যেসব বিষয়:
সরকারি-বেসরকারি সমন্বয়ে স্থায়ী পুনর্বাসন ব্যবস্থা জোরদার
জলবায়ু উদ্বাস্তু পরিবারের তালিকাভুক্তকরণ ও ডিজিটাল তথ্যভাণ্ডার তৈরি
ঝুঁকিপূর্ণ গ্রামগুলোর আগাম সতর্কতা ব্যবস্থা
নারী, শিশু, প্রবীণ ও প্রতিবন্ধীদের জন্য বিশেষ সুরক্ষা কাঠামো
জীবিকাভিত্তিক প্রশিক্ষণ ও বিকল্প কর্মসংস্থান
পরিবেশবান্ধব আবাসন ও গ্রাম রক্ষা বাঁধ নির্মাণ-সংস্কার
স্থানীয় সরকার পর্যায়ে নীতিগত সহায়তা ও সক্ষমতা বৃদ্ধি
১৬ দফা দাবি উপস্থাপন
সেমিনারে উপস্থিত ভুমিহীন ও আশ্রয়ন প্রকল্পের বাসিন্দারা ১৬ দফা দাবি উত্থাপন করেন। প্রধান দাবিগুলো হলো—
সন্দ্বীপের জন্য পৃথক জলবায়ু উদ্বাস্তু নীতিমালা
আশ্রয়ন প্রকল্পে বিদ্যুৎ, বিশুদ্ধ পানি, স্বাস্থ্যসেবা ও কবরস্থান নিশ্চিতকরণ
নদীভাঙন ও সমুদ্রক্ষয় রোধে দীর্ঘমেয়াদি বাঁধ নির্মাণ
বাস্তুচ্যুত পরিবারের সরকারি তালিকা হালনাগাদ ও ডিজিটাল ডেটাবেজ
পুনর্বাসিত পরিবারের কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ
টেকসই ও পরিবেশবান্ধব ঘর নির্মাণ
ঝুঁকিপূর্ণ গ্রামগুলোর অগ্রাধিকার ভিত্তিক পুনর্বাসন
রাস্তা, সেতু, স্যানিটেশন ও ড্রেনেজের উন্নয়ন
শিশুদের নিরাপদ স্কুলে যাতায়াত ব্যবস্থা
নারী ও প্রতিবন্ধীদের জন্য বিশেষ সহায়তা কর্মসূচি
জলবায়ু বিপর্যয়ের আগাম সতর্কতা ব্যবস্থা জোরদার
উপকূলীয় জনগোষ্ঠীর অধিকার নিশ্চিতে জাতীয় পর্যায়ে বিশেষ সেল গঠন
পুনর্বাসন প্রকল্পের নিয়মিত পর্যবেক্ষণ ও এনজিও–সরকার–স্থানীয় সরকারের সমন্বিত কর্মপরিকল্পনা
জলবায়ু উদ্বাস্তু উন্নয়ন প্রকল্পে বিশেষ বাজেট বরাদ্দ
মুক্ত আলোচনায় বক্তারা বলেন, প্রস্তাবিত ১৬ দফা বাস্তবায়িত হলে সন্দ্বীপের হাজারো জলবায়ু উদ্বাস্তু পরিবার মানবিক জীবন ফিরে পাবে এবং পুনর্বাসন কার্যক্রম হবে আরও টেকসই, নিরাপদ এবং ফলপ্রসূ।








