দুবাইয়ে বাংলাদেশি প্রবাসীদের সঙ্গে প্রতারণা: শাহীন চক্রের বিরুদ্ধে অভিযোগ
রাজবাড়ী প্রতিনিধি:
মধ্যপ্রাচ্যের কর্মক্ষেত্র দুবাইয়ে বাংলাদেশি প্রবাসীদের জিম্মি করে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে এক সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের বিরুদ্ধে। স্থানীয়ভাবে “মুন্না–শাহীন চক্র” নামে পরিচিত এই দলের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছেন রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার এক প্রবাসী পরিবারের সদস্যরা।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, দুবাই প্রবাসী মো. মুন্না তিন মাস আগে মাদক সেবনের মিথ্যা অভিযোগে স্থানীয় কর্তৃপক্ষের হাতে গ্রেফতার হন এবং তিন মাসের কারাদণ্ড ভোগ করেন। এ সময় তার পরিবার দেশের বাড়িতে চরম দুশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছিলেন।
পরিবারটি জানতে পারে, ঘোষপট্টির যুবক শাহীন নামে এক ব্যক্তি দুবাইয়ে অবস্থান করছেন। সেই সূত্রে মুন্নার বাবা রশিদ শেখ ও মা মুনিয়া বেগম শাহীনের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। কিছুদিন পর শাহীন দুবাই থেকে ফোন করে জানান, মুন্নাকে মুক্ত করতে হলে ৪ লক্ষ টাকা প্রয়োজন।
পরিবারটি ২০২৫ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি রফিক উদ্দিন মিনহাজ নামে এক ব্যক্তির দুবাই অ্যাকাউন্টে (ডাচ-বাংলা ব্যাংক: ১৩৩১৫১০১০৭৮১৫) টাকা পাঠান। (ট্রান্সিশন নম্বর: ৩৬০৬২৫৫৩৯)।
কিন্তু কয়েকদিন পর শাহীন আবার ফোন করে জানান, আরও ৩ লক্ষ টাকা না দিলে মুন্না বড় বিপদে পড়বেন। অসহায় বাবা-মা আবারও উক্ত অ্যাকাউন্টে অর্থ পাঠান (ট্রান্সিশন নম্বর: ৩৬১৫৮৬৭৭৬)। পরে শাহীন তার স্ত্রীর হাতে সরাসরি আরও ৭৬ হাজার টাকা নিতে বলেন।
সব মিলিয়ে ৭ লক্ষ ৭৬ হাজার টাকা দেওয়ার পরও শাহীন কোনো সহযোগিতা করেননি; বরং পরবর্তীতে ফোন রিসিভ করাও বন্ধ করে দেন।
মুন্না তিন মাসের সাজা শেষে নির্দোষ প্রমাণিত হয়ে জেল থেকে মুক্তি পান এবং পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানান, শাহীন তার মুক্তির জন্য কোনো পদক্ষেপই নেননি।
এরপর পরিবার শাহীনকে টাকা ফেরতের অনুরোধ জানালে তিনি উল্টো হুমকি দেন এবং টাকা ফেরত দিতে অস্বীকার করেন। প্রাণনাশের আশঙ্কায় মুনিয়া বেগম ৯ নভেম্বর ২০২৫ তারিখে গোয়ালন্দ ঘাট থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
থানার অফিসার ইনচার্জ শাহীনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডেকেছিলেন, তবে তিনি হাজির হননি। বর্তমানে মুনিয়া বেগম রাজবাড়ী জেলা আদালতে প্রতারণা মামলার আবেদন করেছেন, যা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
এই ঘটনা মধ্যপ্রাচ্যে অবস্থানরত বাংলাদেশি প্রবাসীদের জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ সতর্কবার্তা হিসেবে দেখা হচ্ছে। প্রবাসী সহায়তার নামে গড়ে ওঠা প্রতারক চক্রগুলো দিন দিন বেপরোয়া হয়ে উঠছে।
ভুক্তভোগী পরিবার সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন— এমন প্রতারক চক্রের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া এবং প্রবাসীদের নিরাপত্তা ও ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত করার জন্য।








