চুরির বিচার করায় গ্রামবাসীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা — উত্তেজনায় উত্তাল উত্তর ধানডোবা
গৌরনদী (বরিশাল) সংবাদদাতা ঃ
বরিশালের গৌরনদী উপজেলার উত্তর ধানডোবা গ্রামে দীর্ঘদিন ধরে চুরি–ছিনতাইয়ের ঘটনায় অতিষ্ঠ ছিল সাধারণ মানুষ। নৌকা, মাছ ধরার জাল, কৃষি সরঞ্জামসহ বিভিন্ন মালামাল চুরি হওয়ার ঘটনায় পুরো এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। স্থানীয়রা দাবি করেন—মাদকাসক্ত আকাশ সরদার (২৫) এসব চুরির সঙ্গে জড়িত।
স্থানীয় নুর মোহাম্মদ সরদার জানান, তার মাছের খামারের নৌকা, লোহার কোদাল, স্টিলের গামলাসহ দামী সরঞ্জাম চুরি করে নিয়ে যায় আকাশ সরদার ও রুবেল। এ ঘটনায় গৌরনদী মডেল থানায় একাধিক অভিযোগও রয়েছে বলে তিনি জানান। একই গ্রামের রুহি দাস জানান, তার নৌকা ও মাছ ধরার জালও চুরি গেছে। মাছচাষী শাহ আলম সরদার বলেন, কিছুদিন আগে সন্ধ্যায় তার খামার থেকে নৌকা ও জাল চুরি করতে গিয়ে আকাশকে হাতেনাতে ধরে এলাকাবাসীর হাতে তুলে দেওয়া হয়।
ক্রমাগত চুরির ঘটনায় পুরো গ্রামে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়লে গ্রামবাসী স্বেচ্ছায় রাতের পাহারার ব্যবস্থা করেন। এর মধ্যেই আবারো ধরা পড়ে আকাশ সরদার, যাকে স্থানীয়রা পেশাদার চোর ও চিহ্নিত মাদকসেবী বলে দাবি করছেন।
পরিস্থিতি সামাল দিতে গ্রামের গণ্যমান্য ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে একটি শালিশি বৈঠকের আয়োজন করা হয়। শালিশে উপস্থিত ছিলেন রাফিজুল সরদার, সোহাগ সরদার, আহাদ সরদার, আলী সরদার, লিটু জয় ধর, বাচ্চু সরদার, রিফাত সরদার, নাঈম সরদার, চান মিয়া সরদারসহ এলাকার দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা। গৌরনদী মডেল থানার এসআই নাঈমুলও শালিশে উপস্থিত ছিলেন।
শালিশে আকাশ সরদার এবং তার বাবা মহিম সরদার মাদকাসক্তি ও বিভিন্ন চুরির ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে গ্রামবাসীর কাছে ক্ষমা চান। ভবিষ্যতে এ ধরনের কাজ আর না করার অঙ্গীকার করে লিখিত মুচলেকায় স্বাক্ষর করেন আকাশ। সাক্ষী হিসেবে স্বাক্ষর করেন শাজাহান ফকির, দেলোয়ার হাওলাদার, পলাশ হাওলাদার ও সালাম মাঝি। এরপর শালিশি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তাকে পরিবারের জিম্মায় দেওয়া হয়।
কিন্তু ঘটনার কয়েকদিন পর গ্রামবাসী জানতে পারেন—আকাশ সরদার ও তার মা সালমা বেগম প্রতিহিংসাবশত শালিশে উপস্থিত নিরীহ ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে বরিশাল আদালতে একটি মিথ্যা মামলা করেছেন। গত ২৬ তারিখও আরেকটি সাজানো মামলা দায়ের করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এতে এলাকায় তীব্র ক্ষোভ ও অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়ে।
সংবাদ সংগ্রহে আকাশদের বাড়িতে কাউকে পাওয়া না গেলেও তার নানি সালেহা বেগম বলেন, “আমার নাতি নিয়মিত মাদক সেবন করে এবং টাকার জন্য আমাদেরও মারধর করে। আপনারা যা ঠিক মনে করেন করেন।”
গ্রামবাসীর অভিযোগ—শালিশে উপস্থিত ব্যক্তিদের কোনো দোষ না থাকা সত্ত্বেও প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতে আকাশ ও তার মা ভিত্তিহীন মামলা করেছেন। ঘটনাটি নিয়ে এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। গ্রামবাসী এই মিথ্যা মামলার দ্রুত তদন্ত, দায়ীদের বিচারের আওতায় আনা এবং আকাশ সরদারের গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে।








