পবিত্র কোরআনের আলোকে পরিত্যাক্ত পাথর থেকে সোনা রুপাসহ মুল্যবান ধাতু আহরনে গাজন পদ্ধতির উদ্ভাবন আহছান উল্লাহর
সৈকত নাসিম,স্টাফ রিপোর্টারঃ পবিত্র কোরআনের অসংখ্য আয়াতে আল্লাহ তাআলা মানুষকে পৃথিবীর লুকানো নিদর্শন, খনিজ, ধাতু, প্রাকৃতিক সম্পদ এবং ভূ-স্তরের রহস্য নিয়ে চিন্তা-গবেষণার নির্দেশ দিয়েছেন। সেই আল্লাহ প্রদত্ত আহŸান থেকেই গবেষক আহছান উল্লাহ নিজস্ব প্রচেষ্টায় উদ্ভাবন করেছেন “গাজন পদ্ধতি” বা বিকল্প বায়োলিচিং পদ্ধতি-তিনটি পরিবেশ সম্মত ব্যকটেরিয়ার সমন্বয়ে উদ্ভাবিত পদ্ধতির মাধ্যমে বাংলাদেশের পরিত্যাক্ত পাথর থেকে সোনা, রূপা ও তামা আহরণ সম্ভব। বহুবার সাফল্য প্রমাণ হওয়া সত্তে¡ও আর্থিক সংকটে এই বৈপ্লবিক গবেষণা আজ থমকে দাঁড়িয়ে আছে।
বরিশালের গৌরনদী উপজেলার উত্তর পালরদী গ্রামে জন্ম নেয়া বহুমুখি প্রতিভার অধিকারি আহছান উল্লাহ সাংবাদিকতা পেশার পাশাপাশি দীর্ঘদিন ভেষজ, ভেষজকৃষি, জলবায়ু ও জীববৈচিত্র নিয়ে কাজ করছেন। জীবনের প্রায় সব সময়টুকু ব্যয় করেছেন এ কাজে। তারকাছে পবিত্র কোরআনের-যে তিনটি আয়াত গবেষণার প্রেরণা হয়ে ওঠে।
১. পৃথিবীর ভেতর লুকানো রিজিক নিয়ে চিন্তার নির্দেশ, “তিনি-ই পৃথিবীতে তোমাদের জন্য যা কিছু আছে-সবকিছুই সৃষ্টি করেছেন।” -সুরা আল-বাকারা (২:২৯)
২. আল্লাহর নিদর্শনসমূহ নিয়ে গবেষণার আহŸান, “বলুন, তোমরা পৃথিবীতে ভ্রমণ করো এবং দেখো, তিনি কীভাবে সৃষ্টি করেছেন।” -সুরা আল-আনকাবুত (২৯:২০)৩. পাহাড়ে ও পাথরে লুকানো সম্পদের ইঙ্গিত, “আর পাহাড়সমূহ তিনি দৃঢ়ভাবে স্থির করেছেন। আর তাতে রেখেছেন অগণিত বরকত ও রিজিক।”
-সুরা ফুচ্ছিলাতঃ (৪১:১০)
এই তিন আয়াতকে সামনে রেখে আহছান উল্লাহ বিশ্বাস করেন-পরিত্যক্ত পাথর আল্লাহর সৃষ্টি। এর ভেতরেও রয়েছে বরকত, রিজিক ও নিদর্শন। শুধু সঠিক পদ্ধতিতে এগুলোকে উদ্ঘাটন করতে হয়।
গাজন পদ্ধতি-বিশ্বাস ও বিজ্ঞান মিলিয়ে এক অনন্য উদ্ভাবন, কোরআনের নির্দেশনা থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে তিনি বহু বছর পরীক্ষায়-নিরীক্ষায় তৈরি করেন অত্যন্ত স্বল্প ব্যয়ী, পরিবেশবান্ধব ও স্বনির্ভর গাজন পদ্ধতি, যার বিশেষত্ব হলো- কোনো ক্ষতিকর রাসায়নিক ছাড়াই পাথর থেকে সোনা, রূপা ও তামাসহ মুল্যবান ধাতু আহরন করা সম্ভব। যা দেশের গ্রামাঞ্চলেও সহজে প্রয়োগযোগ্য একটি প্রযুক্তি।
বাংলাদেশের নদী-বালু-পাথরে পরিত্যাক্তভাবে ছড়িয়ে থাকা মূল্যবান ধাতুর ক্ষুদ্র কণা এ প্রযুক্তির মাধ্যমে সহজ এবং পরিবেশবান্দবভাবে সংগ্রহযোগ্য হওয়ায় এটি হতে পারে দেশীয় এ শিল্পের বিপ্লব।
বাংলার অর্থনীতিতে সম্ভাবনাময় এ উদ্যোগ যদি সরকার বা বে-সরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান এ প্রযুক্তির ওপর নজর দেন তাহলে দেশে উৎপাদিত সোনা, রূপা ও তামার পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে গ্রামীণ পর্যায়ে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।
বাংলাদেশ নিজস্ব প্রযুক্তিতে স্বনির্ভর খনিজ আহরণকারী দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে এভাবে কোরআনের নির্দেশনা-বিজ্ঞানের বাস্তব প্রয়োগ-এবং বাংলার সম্ভাবনা এক সুতোয় গাঁথা হয়ে উঠতে পারে।
অসাধারণ এই উদ্ভাবন, আহছান উল্লাহ তার ব্যক্তিগত সামর্থ্যে কয়েক বছর ধরে পাথর সংগ্রহ, পরীক্ষামূলক প্রক্রিয়া চালানো, রসায়নিক বিশ্লেষণ, ধাতু উত্তোলন পরীক্ষা, প্রক্রিয়া উন্নয়ন সবকিছু একা করেছেন। কিন্তু- একজন সাধারণ মানুষের পক্ষে এত বড় বৈপ্লবিক উদ্ভাবনকে পরবর্তী ধাপে নেওয়া সম্ভব নয়। ল্যাব, যন্ত্রপাতি, মাঠ পর্যায়ের প্রয়োগ-সবকিছুতেই প্রয়োজন পৃষ্ঠপোষকতা ও রাষ্ট্রীয় সহযোগিতা।
দেশের অনাবিষ্কৃত সম্পদ, কোরআনের আধ্যাত্মিক নির্দেশনা আর একজন সাধারণ মানুষের অমানুষিক পরিশ্রমের গল্প-এই তিনের সমন্বয়ে জন্ম নিয়েছে গাজন পদ্ধতি। এটি শুধু একটি উদ্ভাবন নয় বাংলাদেশের অর্থনীতিকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার সুযোগ।
এ রকম প্রায় শতাধীক বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তি, তিনি পবিত্র কোরআনের বিভিন্ন আয়াত নিয়ে গবেষনা করেছেন এবং সব বিষয় নিয়ে একটি অসধারন গ্রন্থ রচনা করেছেন দি কোরান বিয়ন্ড টাইম, অর্থ্য “সময়ের সীমানার পরের কোরআন” “কাল-অতীত চিরসত্য কোরআন”। অর্থনৈতিক সমস্যায় সময়উপযোগি এ গ্রন্থখানা তিনি প্রকাশ করতে পারেননি তবে প্রাপন চেষ্টা চালাচ্ছেন।
আহছান উল্লাহর এখন প্রয়োজন রাষ্ট্রীয় ও প্রাতিষ্ঠানিক সহায়তা, যেন এই উদ্ভাবন বাংলার প্রতিটি মানুষের ঘরে পৌঁছে যায়। কারণ এ গবেষণা কোনো ব্যক্তির নয়-এটি বাংলাদেশের ভবিষ্যতের সম্পদ। সন্ধান-আহছান উল্লাহর।
বিশেষজ্ঞ আলেম মোফাচ্ছেরে কোরান এবং গৌরনদী বন্দর জামে মসজিদের খতিব মাওলানা আবদুল হাকিম বলেন, কোরআনের আলো থেকে জাতীয় স্বার্থে কোরআনের আয়াত ভিত্তিক গবেষণা শুধু আধ্যাত্মিক নয়-বৈজ্ঞানিকও। প্রাকৃতিক সম্পদ উদ্ঘাটনে কোরআন মানুষের বুদ্ধি, পর্যবেক্ষণ ও গবেষণাকে উৎসাহিত করেছে। আহছান উল্লাহর গবেষণা সেই শিক্ষারই আধুনিক প্রমাণ। তার গবেষণা একদিন পুরো জাতিকে দেখাতে পারে- কোরআন শুধু আখলাক, শিক্ষা ও ইবাদতের বই নয় এটি বিজ্ঞান, জ্ঞান, গবেষণা ও আবিষ্কারের উৎস।
কৃষি বিজ্ঞানী ও জাতিসংঘের জলবায়ুবিষয়ক ফ্রেম ওয়ার্কের (ইউএনএফসিসিসি) কৃষক প্রতিনিধি মো. জাকির হোসেন বলেন, গবেষণাটি সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে পরিচালিত হলেও, সরকার, বিশ্ববিদ্যালয়, গবেষণা প্রতিষ্ঠান ও শিল্প–খাতের সহযোগিতা পেলে এটি জাতীয় পর্যায়ে একটি রূপান্তরমূলক প্রযুক্তি হিসেবে দাঁড়াবে।
গৌরনদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা- বলেন, বিষয়টি আমি শুনেছি খুব শীগ্রই সরেজমিনে দেখতে যাবো।
আহছান উল্লাহ বলেন-আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি আল-কোরআন মানবজাতির জন্য একটি চিরন্তন জ্ঞানের উৎস। আমার গবেষণায় গাজন পদ্ধতি বা বায়োলিচিং প্রযুক্তির যে উন্নত সংস্করণ তৈরি হয়েছে, তা মূলত পবিত্র কোরআনের বিভিন্ন বরকতময় আয়াত থেকে। কোরআন আমার কাছে কোনো প্রযুক্তিগত নির্দেশিকা নয় বরং তা গবেষণার দিকনির্দেশনা, কৌতূহল, নৈতিকতা এবং সৃষ্টির রহস্য অন্বেষণের শক্তি। এ প্রযুক্তি প্রমান করে বিজ্ঞানের আধুনিক সম্ভাবনা এবং কোরআনের প্রজ্ঞা সাংঘর্ষিক নয় বরং পরস্পরের পরিপূরক।
তিনি আরো বলেন, আমার লক্ষ্য দেশের পরিত্যক্ত পাথর, নদীর বালি, পলিমাটি ও নিম্নমানের আকরিক থেকে মূল্যবান ধাতু আহরণের একটি পরিবেশবান্ধব, স্বল্পব্যয়ী ও আধুনিক সমাধান তৈরি করা।








