ফকির লালন শাহ’র ১৩৫তম তিরোধান দিবসে হরিশপুরে বর্ণাঢ্য আয়োজন
আব্দুল্লাহ আল মামুন, হরিণাকুন্ডু প্রতিনিধি:
ঝিনাইদহের হরিণাকুন্ডু উপজেলার হরিশপুর গ্রামে নানা আয়োজনে পালিত হচ্ছে বাউল সম্রাট ফকির লালন শাহ’র ১৩৫তম তিরোধান দিবস। বৃহস্পতিবার (১৭ অক্টোবর, ১ কার্তিক) দিনব্যাপী এই আয়োজন ঘিরে মুখর হয়ে উঠেছে গুরু দরবেশ সিরাজ সাইজির মাজার প্রাঙ্গণ ও হরিশপুর লালন একাডেমি।
উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে এবং লালন একাডেমি পরিষদের সহযোগিতায় অনুষ্ঠিত হয় আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও বর্ণাঢ্য লালন মেলা। মেলায় অংশ নিতে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ছুটে এসেছেন বাউল ভক্ত, সাধু-গুরু ও দর্শনার্থীরা। মাঠজুড়ে শতাধিক অস্থায়ী তাবুতে অবস্থান নিয়েছেন সাধুগণ। একতারা-দোতারার তালে মুখরিত পরিবেশে গাওয়া হচ্ছে লালনের রচিত গান।
আয়োজনে সভাপতিত্ব করেন হরিণাকুন্ডু উপজেলা নির্বাহী অফিসার **বি এম তারিক উজ জামান**।
মুখ্য আলোচক ছিলেন বিশিষ্ট লালন গবেষক **খন্দকার কেরামত আলী**।
বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন হরিণাকুন্ডু থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা **মো. শহিদুল হাওলাদার শহিদ**, সালেহা বেগম মহিলা ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ **মো. মুক্তার আলী**, উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা **উজ্জ্বল কুমার কুন্ডু**, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা **শরীফ মোহাম্মদ তিতুমীর**, প্রফেসর **মাহবুব মোর্শেদ শাহীন**, স্থানীয় রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিবর্গ।
### সাধু-ভক্তদের মিলনমেলা
তিন দিনব্যাপী এ আয়োজনে শুধু লালনের আখড়াবাড়িই নয়, বরং তার গুরু দরবেশ সিরাজ সাইজির মাজার প্রাঙ্গণেও চলছে সঙ্গীত ও ভাব বিনিময়ের ধারা। মাঠের দক্ষিণে তৈরি মঞ্চে সন্ধ্যা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত পরিবেশিত হচ্ছে লালন ভাবসংগীত। স্থানীয় শিল্পীদের পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা বাউল শিল্পীরাও সুরে-তালে মেতে উঠেছেন।
স্থানীয়রা জানান, প্রতিবছর এই দিনটি উপলক্ষে হরিশপুর যেন এক মহাসংগীত সাধনার স্থানে পরিণত হয়। ভক্তদের পদচারণায় মুখরিত থাকে পুরো এলাকা। আত্মীয়-স্বজনের আতিথেয়তায় ব্যস্ত থাকতে হয় গ্রামের সব বাড়িঘরকে।
### নিরাপত্তা ও প্রস্তুতি
উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, উৎসবকে কেন্দ্র করে মাজার প্রাঙ্গণ ও আশপাশের এলাকায় নেওয়া হয়েছে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা। যেকোনো অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি এড়াতে মোতায়েন রয়েছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার **বি এম তারিক উজ জামান** বলেন, “বাউল সম্রাট লালন ফকিরের তিরোধান দিবস ঘিরে দিনব্যাপী আয়োজন করা হয়েছে আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের। পরবর্তী বছরগুলোতেও এই আয়োজন আরও বড় পরিসরে করার পরিকল্পনা রয়েছে।”
### ইতিহাসের পাতা থেকে
বাউল সম্রাট লালন শাহ ১২৯৭ বঙ্গাব্দের ১ কার্তিক তিরোধান করেন। তার স্মরণে প্রতিবছর হরিশপুরে এই স্মরণোৎসব অনুষ্ঠিত হয়। এ উৎসব বাউল দর্শন, মিলন ও সাম্যের বার্তা ছড়িয়ে দেয় ভক্ত-অনুসারীদের মাঝে।
### সাধুদের কণ্ঠে লালনের বাণী
একজন সাধু বলেন, “আমরা এখানে এসেছি গুরু সিরাজ সাইজির মাজারে শাঁইজীর বাণীচর্চা ও সাধনার জন্য। এখানে হিংসা নেই, অহঙ্কার নেই, জাত-পাত নেই — এটাই শাঁইজীর মূল শিক্ষা।” অনেক ভক্ত জানান, তারা লালনের পোশাক পরে গান না গাইলেও সেই ভাব সঞ্চারে অংশ নিতে পেরে আনন্দিত।








